ওয়েব বাউন্স রেট কি? কারণ এবং কমানোর উপায়
অনেকেরই বাউন্স রেট প্রসঙ্গ নিয়ে সংশয় থাকে। এই প্রবন্ধে আমি বাউন্স রেট সম্পর্কে সব খুঁটিনাটি তুলে ধরার চেষ্টা করব। আশাকরি ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণ নিবন্ধটি পড়বেন।
বাউন্স রেট কি?
বাউন্স হলো, একজন পাঠক একটি ওয়েবসাইটে এসে ঐ সাইটের অভ্যন্তরীণ কোন পেজ বা লিংকে ক্লিক না করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা অথবা দ্রুত বেড়িয়ে যাওয়া।
অর্থাৎ, কেউ একটি সার্চ ইঞ্জিন ফলাফল পৃষ্ঠায় আপনার ব্লগের একটি লেখা খুঁজে পেলো। ক্লিক করে, প্রবন্ধটি পড়ে এবং তারপর অন্য কোনো পৃষ্ঠায় না গিয়ে আপনার সাইট থেকে বেরিয়ে যায়। এটাই হলো বাউন্স করা। আর বাউন্সের শতকরা হার কে bounce rate বলে। বাউন্স রেট কথাটির বাংলা শব্দার্থ হচ্ছে, “বহিষ্কারের হার”।
বাউন্স রেট কিভাবে হিসাব করা হয়?
বাউন্স রেট হিসেবের আগে, টাইম সেশন কি? সেটা জানা দরকার। বিষয় দুটি একসঙ্গে জড়িত। Time Session প্রক্রিয়া হলো: একজন পাঠক একটি পৃষ্ঠায় এসে, 2 মিনিট 40 সেকেন্ডের জন্য প্রবন্ধটি পড়ে, তারপর অন্য একটি নিবন্ধে ক্লিক করে আরো 3 মিনিট সময় ব্যয় করে এবং আপনার সাইট ছেড়ে চলে যায়, তাহলে পৃষ্ঠায় সেশন সময় হবে 2 মিনিট 40 সেকেন্ড। পাঠক দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় যে অতিরিক্ত আরো 3 মিনিট ব্যয় করেছে, সেটা কিন্তু যোগ হবেনা।
সেই 3 মিনিট তখনি যোগ হতো, যদি পাঠক তৃতীয় পৃষ্ঠায় বা তারপরের অন্য কোনো পৃষ্ঠায় ক্লিক করতো। অর্থাৎ এক পৃষ্ঠা থেকে অন্য পৃষ্ঠায় ক্লিক না হওয়া পর্যন্ত আগের পেজে ব্যয় করা সময়, সেশনে যুক্ত হয় না।
আর যদি পাঠক, একটি পৃষ্ঠায় আসে, 2 মিনিট 40 সেকেন্ড প্রবন্ধটি পড়ে। এবং দ্বিতীয় বা অন্য কোন পেজে ক্লিক না করে। আর সেই সাইট থেকে বেড়িয়ে যায়। তখন কি হবে?
মূল আলোচনা এটাই! এখানে সময় হবে শূন্য মিনিট। Google Analytics অনুযায়ী Session time যোগ হবে 0 মিনিট। আর এটাই হলো একটা পেজ বাউন্স। অর্থাৎ যতজন পাঠকের টাইম সেশন তৈরি হবে না, ততটা বাউন্স তৈরি হবে।
এবার আসি বাউন্স রেটের শতকরা হিসাব নিয়ে। ধরি, আপনার ওয়েবসাইটে ১০০০ ভিজিটর এলো। এদের মধ্যে ৫০০ জন একটি প্রবন্ধ পড়ে অন্য পৃষ্ঠায় ক্লিক না করে সাইট ত্যাগ করলো। এখানে বাউন্স রেট হবে ৫০%।
সেশন টাইম যদি বেশি হয় এবং পাঠক আপনার সাইটের এক পেজ থেকে অন্য পেজে দৌড়াদৌড়ি করে (পেজ গুলোতে বেশি সময় অবস্থান করে)। তখন গুগল বুঝবে এই সাইটের পেজ গুলোতে মাল আছে।🤫। মানে পাঠকের চাহিদাপূর্ন তথ্য আছে। ফলস্বরূপ; পেজ ও সাইটের রেঙ্ক করার সম্ভবনা বেড়ে যায়।
বাউন্স রেট এবং এসইও (SEO) এর মধ্যে সম্পর্ক কি?
অনেকেই বলেন: বাউন্স রেট বেশি হলে, সাইট বা পেজ SEO করে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না। আসলে কথাটা উল্টো হবে! মূল কথাটা হলো; আপনার এসইও (SEO) খারাপ হলে, বাউন্স রেট বেশি হবে। বাউন্স রেট হলো এসইও এর একপ্রকার ফলাফল।
বাউন্স রেট কি গুগল সার্চ ইঞ্জিন র্যাঙ্কিংকে প্রভাবিত করে?
এ বিষয়ে অনেকেরই ভুল ধারণা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, একটি ওয়েবসাইটের বাউন্স রেট বেশি হলে সেটি সার্চ ইঞ্জিনে র্যাঙ্কিং এ খারাপ প্রভাব ফেলে। অর্থাৎ বাউন্স রেট যদি বেশি হয়, তাহলে গুগল আপনার সাইটকে ডাউন করে দেবে। কিন্তু এই কথাটি যুক্তিহীন।
বাউন্স রেট কখনো আপনার ওয়েবসাইটকে র্যাঙ্কিং করতে বাধা দেয় না। বাউন্স রেট হচ্ছে আপনার ওয়েবসাইট সম্পর্কে একটা তথ্য। তথ্যটা হলো; ওয়েবসাইটে দর্শকের প্রবেশ ও বেরিয়ে যাওয়ার সময়সূচির তালিকা বা পার্সেন্টেন্স। বাউন্স রেট গণনা করা হয় গুগল এনালিটিক্স (Google Analytics) এর মাধ্যমে। অনেক ওয়েবসাইট তো রয়েছে যারা গুগল এনালাইটিক্স ব্যবহারই করে না। আর Google Analytics ব্যবহার না করলে। গুগোল কখনোই আপনার ওয়েবসাইটের বাউন্স রেট হিসেব করতে পারবে না।
বাউন্স রেট ওয়েবসাইটে প্রভাব ফেলেনা, তার কিছু উদাহরণ:
ডিকশনারি মূলক ওয়েবসাইট এবং তথ্যভিত্তিক ওয়েব সাইটগুলোর বাউন্স রেট ৯০ শতাংশের বেশি থাকে। যেমন, উইকিপিডিয়া (Wikipedia), dictionary.com ও বিভিন্ন প্রশ্নোত্তর মুলক ওয়েবসাইটগুলো।
আপনি বা আমি ডিকশনারিতে শুধু সংক্ষিপ্ত ছোট্ট একটা প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য প্রবেশ করি। সর্বোচ্চ সেখানে এক মিনিট সময় ব্যয় করি। মনে করুন আপনি “প্রজ্ঞা” শব্দের অর্থ জানতে চান। সেটা লিখে সার্চ করলেন। বাংলা ডিকশনারি চলে এলো। আপনি সেখানে ঢুকলেন। “প্রজ্ঞা” শব্দের অর্থ “সঠিক জ্ঞান”। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে উত্তরটি পড়লেন। তারপর তো সেখানে আপনার অপেক্ষা করার কথা নয়, অবশ্যই বেরিয়ে আসবেন। আর বেরিয়ে আসলেই হবে বাউন্স। উইকিপিডিয়াতে আমরা সর্বোচ্চ একটি প্রবন্ধ পড়ে, সরাসরি বেরিয়ে আসি। এটাও বাউন্স।
এই সকল সাইটে বাউন্স ছাড়া কিছুই নেই, শুধু বাউন্স আর বাউন্স। কিন্তু এত বাউন্স হওয়া সত্ত্বেও কেনো এই সাইট গুলো সার্চ ইঞ্জিনে উচ্চ র্যাঙ্কিং থাকে? এর কারণ হলো এখানে পর্যাপ্ত এবং সঠিক তথ্য রয়েছে। যা বারবার পাঠকদের আকর্ষণ করে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে বাউন্স রেট এখানে কোনো প্রভাব ফেলে না।
আরো কিছু উদাহরণ দিই: আপনি এই মুহূর্তে আমার এই প্রবন্ধটি পড়ছেন। হঠাৎ আপনার মোবাইলে কল আসলো। আপনি ফোন রিসিভ করলেন। 15 থেকে আধা ঘন্টা, এমনকি প্রায় ঘন্টা খানেক কথা বললেন। এতে কিন্তু আমার পেজটি বাউন্স হবে। কারণ, কল রিসিভ করলেই নেট কানেকশন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে (যদি সিম দিয়ে নেট চালান)। ব্রাউজার এটাকে বাউন্স হিসেবে গণ্য করবে। ভেবে দেখুন এটা কিন্তু আপনার বা আমার ইচ্ছা নয়। অনাকাঙ্ক্ষিত বাউন্স।
এছাড়াও হাত থেকে ফোনটি মাটিতে পড়ে সুইচ অফ হয়ে গেল বা বিদ্যুৎ চলে গিয়ে ওয়াইফাই (WiFi) সংযোগ বন্ধ হয়ে গেল। তৈরি হল বাউন্স। রাতে একটি প্রবন্ধ পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেলেন। ঘুম ভাঙলো সকালে। এটা অবশ্যই বাউন্স। অনেক সময় ভুলে ব্যাক বাটনে টাচ্ লেগে আগের ট্যাবে ফিরে এলেন। এটিও বাউন্স।
আর আমাদের দেশ সহ বিভিন্ন দেশে কিছু ফাজিল-দুষ্টু ব্যক্তি রয়েছে। যারা বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য ওয়েব সাইটে প্রবেশ করে এবং কমেন্ট বক্সে লিঙ্ক দিয়ে চলে যায়। এরাও বাউন্স রেট তৈরির বড় পোকা।🤗।
নোট: বিজ্ঞাপন বা প্রবন্ধের ভিতর দেওয়া অন্য সাইটের লিংকে প্রবেশ করাটা বাউন্স বলে ধরা হয় না। এটাকে হিটিং অর্থাৎ টাইম সেশন ধরা হয়।
এবার অবশ্যই বুঝেছেন; বাউন্স রেট গুগল সার্চ ইঞ্জিন র্যাঙ্কিংকে কখনো প্রভাবিত করে না। Google নিজেই বলে, বাউন্স রেট তাদের অ্যালগরিদমের একটি ফ্যাক্টর নয়, অন্যান্য মেট্রিক্স গুলো মূল ভূমিকা পালন করে।
র্যাঙ্কিং এবং বাউন্স রেটের মধ্যে সম্পর্ক কি?
র্যাঙ্কিং হল কোন ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিন ফলাফল পৃষ্ঠায় টপলিস্টে নিজের স্থান দখল করার প্রক্রিয়া। আর বাউন্স রেট হলো এই প্রক্রিয়ায় আপনি কতোটুকু সফল তার শতকরা হিসাব। অর্থাৎ বাউন্স রেট একটি হিসাব। এর বেশি কিছু নয়।
বাউন্স রেট কি কাজে লাগে?
বাউন্স রেট আপনাকে যা যা দেখাবে: কোন পৃষ্ঠাগুলোতে পাঠকরা বেশি সময় দিয়েছে। কোন পৃষ্ঠাগুলো উপেক্ষা করেছে। কোন পৃষ্ঠাগুলো ক্লিক করে পাঠকরা আপনার ওয়েবসাইটে বেশি ভিজিট করেছে। কোন পৃষ্ঠাগুলোতে পাঠকেরা বাউন্সিং বেশি করেছে, ইত্যাদি।
আপনি যখন দেখবেন, কয়েকটি পৃষ্ঠায় বাউন্সিং খুবই বেশি দেখাচ্ছে। এতে বুঝে যাবেন, ওই পৃষ্ঠা গুলো পাঠকদের কাছে ভাল লাগেনি অথবা ত্রুটি রয়েছে। এবং অবশ্যই পৃষ্ঠাগুলো সংশোধন করার চেষ্টা করবেন। এটাই বাউন্স রেটের কাজ।
কতটা বাউন্স রেট সাইটের জন্য ভালো?
যেহেতু বাউন্স রেট র্যাঙ্কিং ফ্যাক্টর নয়। সেহেতু ভালো-মন্দ ব্যাপারটা এখানে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। বাউন্স রেট আপনাকে বুঝায়, পাঠকদের জন্য আপনার ওয়েবসাইট কতটা উপযুক্ত। এবং আপনি দর্শক ধরে রাখতে কত শতাংশ সফল।
প্রতিটি ওয়েবসাইটেই বাউন্স রেট রয়েছে এবং থাকবে। যেহেতু, পাঠক হলো স্বাধীন। এরা যখন খুশি যার-তার উন্মুক্ত ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারে এবং যখন তখন বেরিয়ে যেতে পারে। এই কারণে প্রতিটি ওয়েবসাইটে বাউন্স রেট লেগেই থাকে। 40% এর নিচে খুব ভালো। 60% এর আশপাশ থাকলে মোটামুটি এবং 80% এর অধিক হলো অতিরিক্ত খারাপের লক্ষণ। আর যদি অতিরিক্ত বাউন্স রেট হয়। আপনাকে এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে। জানতে হবে কেন পাঠক আপনার ওয়েবসাইট ছেড়ে দ্রুত বেরিয়ে যায়।
বাউন্স রেট দেখার উপায় কি?
আপনার নিজের ওয়েবসাইটের প্রতিটি পৃষ্ঠার বাউন্স রেট দেখতে পাবেন গুগল অ্যানালিটিক্স (Google Analytics) এর মাধ্যমে। আপনার যদি একটি জিমেইল অ্যাকাউন্ট থাকে। তাহলে আপনি গুগল অ্যানালিটিক্স অ্যাকাউন্টে সাইন আপ করে, উক্ত সুবিধা পেতে পারবেন।
ধাপ: Google Analytics গিয়ে Dashboard থেকে Behavior> Site Content> All Pages.
বাউন্স রেট বেশি হওয়ার কারণ কি?
আপনার ওয়েবসাইটে যদি বাউন্স রেট খুবই বেশি দেখা যায়। তাহলে বুঝতে হবে নিচের কিছু বিষয়ের সঙ্গে আপনার সাইট জড়িত।
* ধার করে লেখা বা কপিরাইট সমস্যা।
* গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই।
* লো কোয়ালিটি ওয়েবসাইট।
* বিজ্ঞাপন (Ads) দিয়ে ভরপুর।
* টাইটেলের সঙ্গে পোস্টের মিল নেই।
* ওয়েবসাইট লোডিং স্পীড খুব কম।
* প্রবন্ধে অসঙ্গতিপূর্ণ ভাষা রয়েছে।
* ভুল বানানে ভরা বা জগাখিচুড়ি লেখা।
* পৃষ্ঠার বিন্যাস খারাপ।
* মানহীন প্রবন্ধ।
* টেমপ্লেট কাস্টমাইজেশন সমস্যা।
* হেনস্ত বা বিভ্রান্ত মূলক কিছু রয়েছে।
* পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব ইত্যাদি।
কিভাবে বাউন্স রেট কমানো যায়?
মূলত বাউন্স রেট কমাতে পারেন, বাউন্স রেট হওয়ার কারণগুলো সমাধান করে। এছাড়াও আসুন জেনে নেই কিছু দরকারি টিপস।
* প্রবন্ধের সৌন্দর্য ও মান বাড়ানো।
* সাইট loading speed ঠিক করা।
* blog বা সাইটের design সুন্দর করা।
* Related posts/articles এর ব্যবহার।
* Internal linking এর ব্যবহার করুন।
* অন্ত্যধিক বিজ্ঞাপনের ব্যবহার করবেন না।
* প্রবন্ধ গুলোতে images (ফটো) যুক্ত করার চেষ্টা করুন।
* প্রবন্ধের অনুচ্ছেদ গুলো বড় করবেন না। ছোট ছোট প্যারা করুন।
* সম্ভব হলে, আর্টিকেলে videos ব্যবহার করুন।
* Table of contents এর ব্যবহার করুন।
* আর্টিকেলে প্রচুর শব্দের ব্যবহার করুন।
এছাড়া যদি আপনার মাথায় নতুন কোন বুদ্ধি আছে সেটাও প্রয়োগ করে দেখতে পারেন।
শেষ কথা: এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানা থাকে, তাহলে মন্তব্য বক্সে ছুড়ে মারুন (লিখে জানাবেন)। জ্ঞান বিতরণে কিপটামি করবেন না।