যে ভাবে ৫টি ধাপে একটি ভালো মানের বক্তব্য লেখা ও গুছিয়ে বলা যায়
ভালো বক্তব্য মানুষের সামনে গুছিয়ে বলবেন কী ভাবে? জানেন কি? একশ জনে বড়জোর হয়তো একজন ঠিকঠাক গুছিয়ে বক্তব্য তৈরী করতে পারে। আসুন পাঁচ ধাপে একটি ভাল বক্তব্য লেখা শিখে নিই। সে বক্তব্য দু মিনিটের হোক বা ২০ মিনিটের। একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাট মেনে চললে আপনার বক্তব্য আকর্ষণীয় হতে বাধ্য।
ভালো বক্তব্যের হাজারো ফরম্যাট হতে পারে। কিন্তু প্রথম প্রথম আপনি ফর্ম নিয়ে অত ভাববেন না। যে কোনও একটি নির্দিষ্ট ফর্ম্যাটকে ধরে রেখে শুধুমাত্র নিজের কনটেন্ট টাকে ভালো করার কাজ চালিয়ে যান। আর আপনি ধৈর্য নিয়ে আমার এই আর্টিকেলটা পড়লে ৫ ধাপে একটি ভালো বক্তব্য লিখতে বা তৈরী করতে পারেন।
এই আর্টিকেলে স্টেপ ফরম্যাট নিয়ে আলোচনা হবে এবং এভাবেই বক্তব্য রাখা শুরু করুন। মানুষের সঙ্গে ভালো বলা কেন গুরুত্ব। আমি হাজারটা কারণ বলতেই পারি কিন্তু আপনি আপনার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে ভেবে দেখুন তো। আপনি নিজেই জানেন মানুষের সামনে মনের কথা খুলে বলা, স্পষ্ট করে, পরিষ্কার করে মানুষের সামনে কথাটাকে তুলে ধরা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
যে ব্যক্তি মুখ খুলে নিজের কথা অন্যকে বলতে পারে, সে যা চায় তাই পায়। আর যে বেচারা মুখ চোড়া সে চিরকাল আড়ালেই রয়ে যায়। আমরা প্রত্যেকে চাই অন্যেরা আমার কথা শুনুক, আমার কথা মতো চলুক। কিন্তু তার জন্য এই পাঁচ ধাপ মেনে এগোতে হবে।
১ নম্বর হল: হুক।
২ নম্বর হল: প্রমিস।
৩ নম্বর হল: ইটিআর বা আর্ন দ্য রাইট।
৪ নম্বর হল: ডিটেলস।
৫ নম্বর হল: সিটিএ কল টু অ্যাকশন।
এই প্রবন্ধের প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত দুটি ধাপ হয়ে গেছে। হুক আর প্রমিস। এবার আসবে তৃতীয় ধাপ অর্থাৎ ইটিআর বা আর্ন দ্য রাইট, মানে আমার আপনাকে জ্ঞান দেওয়ার আদৌ অধিকার আছে কি না? আমি কে যে আপনি আমার কথা শুনবেন!
আমার পরিচয়টা এখানে আমাকে দিতে হবে। তাই এখানে আপনার পরিচয় এবং পেশা বা কর্ম বলতে হবে। আপনার কর্মজীবনে আপনি কি কি সুনাম কুড়িয়েছেন এর দু একটি কথাও বলতে পারেন। যখন আপনি আপনার কর্ম এবং দক্ষতা মানুষের কাছে তুলে ধরবেন, তখন মানুষ বুঝতে পারবে যে আপনি কোন কাজে কতটুকু দক্ষ এবং আপনার কথা কতটুকু শোনা যৌক্তিক।
আমার এই বক্তব্যটা রাখার যোগ্যতা আছে কি না, ঠিক একইভাবে আপনাকেও নিজের পরিচয় দিতে হবে। নিজের সম্বন্ধে কিছুটা বলতে হবে। কতটুকু বলবেন?
ওই দর্শকদের যতটুকু প্রয়োজন শুধু সেটুকুই বলবেন। যে বক্তব্য রাখতে উঠেছেন শুধু সেই বিষয় সংক্রান্ত ঠিক যেটুকু শুধু সেটুকুই বলবেন। কারণ বেশি বললে মূল বক্তব্য ভুলে যাবেন।
এবার চলে আসি চতুর্থ ধাপে। চতুর্থ ধাপে ডিটেলস। কিসের ডিটেল? সেই যে দ্বিতীয় ধাপে আপনি যে প্রমিস করেছিলেন। যে পয়েন্ট করে করে বলেছিলেন যে আমি এটা শেখাব, ওটা শেখাব, সেটা শেখাব। এখানে বসে পয়েন্ট ধরে ধরে বিস্তারিত ব্যাখ্যা গুলো দেবেন, এটাই হল আপনার বক্তব্যের মেন বডি।
আমার এই বক্তব্যের দ্বিতীয় ধাপের প্রমিস কী ছিল? আমি আপনাকে পাঁচ ধাপে একটি ভাল বক্তব্য লেখা শেখাব। তো সেখানে প্রথম ধাপ ছিল হুক। হুক মানে আপনার শ্রোতার মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য কোনও কিছুতে তার মনোযোগ কে নিজের দিকে টেনে আনা বা আটকে ধরা। এবার সেটা করার দুটি উপায় আছে। আপনাকে কোন একটি প্রশ্ন করতে হবে। যে প্রশ্ন তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অথবা আপনাকে কোন একটি স্ট্যাটিসটিক্স বা ফ্যাক্ট দিতে হবে।
হয় শকিং কোশ্চেন নয়তো শকিং ফ্যাক্ট। খেয়াল করে দেখুন আমার এই বক্তব্যের শুরুতে দুটোই করেছি। আমি প্রথমে একটি শকিং কোশ্চেন নিয়ে শুরু করেছি যে গুছিয়ে কথা বলতে শিখতে চান?
এই গুছিয়ে কথা বলার চিন্তা প্রত্যেকের মাথায় এবং এই প্রশ্ন করলে আপনি মন দিয়ে আমার কথা শুনেছেন। সাথে সাথে আমি একটি শকিং স্ট্যাটিসটিক্স বা শকিং ফ্যাক্টর দিয়েছি। আমি বলেছি যে একশ জনে একজনও হয়ত ভালো করে গুছিয়ে বক্তব্য বা ভাষণ লিখতে/বলতে পারেন না। এই সংখ্যাটা একশ জনে একজন নাকি ০.৩৫। তাতে কিছু আসে যায় না। কিন্তু আপনি কোন একটি সংখ্যা দিচ্ছেন, একটি হিসাব দিচ্ছেন মানে ব্যাপারটা খুব সিরিয়াস। আপনি দেখবেন আপনার শ্রোতারা বা আপনার দর্শকরা তখন মন দিতে বাধ্য হবে।
এর পরের ধাপে আসছে প্রমিস। আপনার বক্তব্য শুনলে শ্রোতারা কী পাবেন? কেন শুনবেন তাঁরা আপনার কথা? কেন তারা আপনাকে সময় দেবে? সেখানে আপনাকে ১.. ২.. ৩.. ৪.. করে নির্দিষ্ট করে আগেই বলে দিতে হবে যে; এটা পাওয়া যেতে পারে।
যেমন আমি আর্টিকেলের শুরুতেই বলে দিয়েছিলাম, আপনি আমার লেখাটা পড়লে, আমার সঙ্গে থাকলে, আমাকে সময় দিলে ৫ ধাপে একটি ভালো বক্তব্য লেখার কথা শিখতে পারেন। আপনার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই, আপনি যে বিষয়ে বক্তব্য রাখবেন, আপনার বক্তব্য শুনলে দর্শকের যে লাভ হবে, শ্রোতারা যা পাবেন, যেটুকু তাঁরা নিতে পারবেন, সেটুকু সম্বন্ধে আপনাকে আগে বলে দিতে হবে।
তাহলে তারা সিদ্ধান্ত নেবে যে তারা আপনার সাথে থাকবেন নাকি থাকার দরকার নেই, চলে যাবেন। এই প্রমিসের ধাপে আপনার এক্সপেকটেশন সেটিং হচ্ছে শ্রোতাদের।
প্রমিস এর পরে আসছে তৃতীয় ধাপ ইটিআর বা আর্ন দ্য রাইট। যেখানে আপনি নিজের সম্বন্ধে ঢাক পেটাবেন, নিজের সম্বন্ধে খুব রিলেভেন্ট কথাটুকু প্রয়োজনীয় কথাটুকু আপনি জানিয়ে দেবেন।
ইটিআর এর পর আসছে চতুর্থ ধাপ বা ডিটেলস।আমার আর্টিকেলে আপনি দেখুন আমি এখানে ডিটেলস অলরেডি পরপর পরপর দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু এবং এখানে আমি টিচিং এবং ইমপ্লিমেনটেশন, থিওরি এবং প্র্যাকটিক্যাল দুটোকে মিলিয়ে মিশিয়ে দিয়ে আমি, যে ধাপ লেখা উচিত বা যে ধাপ ফলো করা উচিত বলছি, কাজেও সেটাই করে দেখাচ্ছে। আমার লেখাতে সেই ধাপগুলো মেনেই কিন্তু চলছি আমি।
সবার শেষে আসবে। সিটিএ বা কল টু অ্যাকশন। এটাই হচ্ছে পঞ্চম ধাপ। এটা হল; আপনি গোটা বিস্তারিত একটি বিষয় বলে দেওয়ার পর, বোঝানোর পর এবার কিছু একটি নির্দিষ্ট কাজ করতে বলছেন।
শুধু নলেজ নিয়ে তো লাভ নেই। অ্যাকশন দরকার। ইমপ্লিমেন্টেশন দরকার। এই পঞ্চম ধাপে কল টু অ্যাকশন এ আপনি আপনার শ্রোতাদের কিছু একটি করতে বলছেন, সেই অ্যাকশনটা দিচ্ছেন। তাঁদের কোন একটি টেক হোম কোনও পয়েন্ট দিচ্ছেন। হয়তো আপনি কিছু কিনতে বলছেন তাঁদের। কোনও সংস্থায় জয়েন করতে বলছে। কোনও কাজ শুরু করতে বলছে বা কোনো কিছু করতে নিষেধ করছেন।
আপনি বলে দিচ্ছেন যে এখান থেকে বাড়ি গিয়ে আজ থেকে এটা করা শুরু করবেন। যাই করতে বলছেন, আপনার বক্তব্য শোনার পর আপনার কথা শুনে কিছু জানার পর দর্শকদের বা শ্রোতাদের যেটা করা শুরু করতে হবে বা যা প্রয়োগ করতে হবে সেটা হচ্ছে: কল টু অ্যাকশন।
আমার বক্তব্যে কল টু অ্যাকশন কি? ঐ যে, আমার এই আর্টিকেল শেয়ার করুন। আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন। আপনার এই আর্টিকেল পড়ে কি মনে হচ্ছে, আপনি এখানকার শিক্ষাটা নিতে পারছেন কিনা? সেটা সম্বন্ধে আপনি আমাকে কমেন্টে লিখে জানান।
আর কোন ধরণের আর্টিকেল হলে বা কোন বিষয়ে হলে লেখা চান সেটা আমাকে জানান। তাহলে আপনি যেটুকু শিখলেন বা পড়লেন শুধু সেটুকুতে আবদ্ধ না থেকে এটা শুধু এন্টারটেনমেন্ট না রেখে আপনি অ্যাকশন নিলেন।
অ্যাকশন টা কি হলো? ঐ আমার লেখা শেয়ার করা, কমেন্টে লেখা। আপনার বক্তব্য দু মিনিটের হোক বা ২০ মিনিটের। এই ৫ ধাপ কে ফলো করুন। এই ফরম্যাটে পরপর নিজের কন্টেন্ট নিজের বিষয়বস্তু বসিয়ে দিন এবং বলা প্র্যাকটিস করা শুরু করে দিন।
ক্রেডিট: প্রবীর চ্যাটার্জী
মিডলাইফ ট্রান্সফরমেশন কোচ।