কীভাবে নিজেকে ৫টি উপায়ে Panctual বা সময়নিষ্ঠ করে তুলবেন? আসুন জেনে নিই

Panctual (সময়ানুবর্তিতা বা সময়নিষ্ঠ) হওয়াটা জীবনে কেন জরুরি সে আলোচনার জন্য শেষপর্যন্ত সঙ্গে থাকুন। তো যে কথা বলছিলাম। সময়ানুবর্তিতার সঙ্গে ভালো মানুষের কোনও সম্পর্ক নেই। গোটাটাই প্রায়োরিটির প্রশ্ন। আমি যেখানে প্রায়োরিটি দেই সেখানে সময়মত পৌঁছাব। দুনিয়ার সবথেকে ঢিলে সবথেকে দায়িত্বজ্ঞান হীন মানুষটাও কোনওদিন পরীক্ষার হলে দেরি করে ঢোকেননি। ইচ্ছে করে কেউ ট্রেন বা প্লেন ধরতে দেরি করে পৌঁছান না। দেরি হলে এটা মিস ক্যালকুলেশনের জন্য হয়। রাস্তায় কত ট্রাফিক থাকবে, জ্যাম হবে কি না, সেটা হিসেব করতে ভুলের জন্য হয়। 

কিন্তু আজ অবধি কেউ বলেননি; ঠিক আছে আমি যাব তারপরে পরীক্ষা শুরু হবে, কিংবা আমি গেলে তবে না ট্রেন ছাড়বে! সেটা কেউ বলেন না। কারণ আমরা জানি ওখানে আমার জন্য কোনও কিছু অপেক্ষা করে থাকবে না। কিন্তু সেই একই মানুষ অন্য কোথাও দেরি করে পৌঁছয়। মানুষকে ডেকে বসিয়ে রাখে। মানুষকে সময় দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখে। এখানে কোথায় যায় তার সময়ানুবর্তিতা?। 

নিজেকে Panctual বা সময়নিষ্ঠ করে তোলা

পরিষ্কার উত্তর হল: সে পারে কিন্তু করে না। প্রশ্নটা প্রায়োরিটির, যেখানে প্রায়োরিটি আছে, যেখানে আমার প্রয়োজন আছে, সেখানে আমি একদম সময়ের আগে পৌঁছে যাব। যেখানে প্রয়োজন নেই, প্রায়োরিটি দিচ্ছি না, সেখানে ধুর! অপেক্ষা করুক না; যাব তো। 

মোদ্দা কথা হল যেখানে আমার হারানোর ভয় আছে সেখানে আমি পাংচুয়াল। আমি সময়মত না গেলে কোনও কিছু মিস হয়ে যাবে। তাহলে আমি সময়মত যাব। এবার এই মিস হওয়ার ব্যাপারটা দু রকমের। কিছু মিস হওয়া সাদা চোখে দেখা যায় তৎক্ষণাৎ ফল পাওয়া যায় এবং কিছু মিশ্র সাদা চোখে দেখা যায় না। কিন্তু দীর্ঘদিনের আমাদের জীবনের উপর প্রভাব ফেলে। 

এই প্রকট ভাবে বোঝা যাওয়া সাদা চোখে দেখা যাওয়ার মতো অবভিয়াস কনসিকোয়েন্স গুলো কীরকম? ধরুন দেরি করে গেলে পরীক্ষার হলে ঢুকতে পারব না। দেরি করে গেলে ব্যস্ত নেতা বা অফিসার বেরিয়ে যাবে। অফিস বা ব্যাঙ্ক বা দোকান বন্ধ হয়ে যাবে। ট্রেন বা প্লেন বা বাস ছেড়ে যাবে। এই প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আমার Panctual হওয়া বা না হওয়ার ফল প্রকট ভাবে চোখের সামনে অবভিয়াসলি দেখা যাচ্ছে। এই সব ক্ষেত্রে আমি পাংচুয়াল হবই হব। 

সমস্যাটা হল: সাটল কনসিকোয়েন্স গুলোকে নিয়ে। পাংচুয়াল না হওয়ার প্রায় অদৃশ্য কিছু ফল দীর্ঘদিন ধরে জমতে থাকে। পাঁচ বছর দশ বছর ধরে জমতে জমতে সেগুলো আমাদের রেপুটেশন নামের এক ভয়ঙ্কর অ্যাসেড তৈরি করে দেয়। অ্যাসেড বলুন বা লাইভিবিলিটি। রেপুটেশন ব্যাপারটা দু-দিকেই খাটে। বাকি দুনিয়া আমাকে ঠিক কীভাবে ট্রিট করবে, সেটা ঠিক হয় আমার এই রেপুটেশন দিয়ে। 

আমরা তো সমাজে থাকি। কাজেই অন্য মানুষদের সাথে আদান প্রদানের মাধ্যমেই আমাদের জীবন চলে। অন্যেরা আমাকে কী ভাবে ট্রিট করছে, তারা আমাকে কী ভাবে কতটা কাজ দিচ্ছে, আমার উপর কতটা ভরসা করছে, আমার দিকে কতটা আশা করে তাকিয়ে আছে অথবা নেই, সেটা দিয়ে আমার জীবন নির্ভর করে। সেই নির্ভরতার অনেকটা জুড়ে রয়েছে আমার Punctuality. 

আপনার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ভেবে দেখুন তো। মনে করুন, আপনার হাতে কোনও কাজ আছে এবং আপনার থেকে কাজ পাওয়ার আশায় দুজন আপনার কাছে ঘুরঘুর করছে। এদের মধ্যে একজন সবসময় প্রত্যেকবার নির্দিষ্ট সময়ে আসে। আরেকজন প্রত্যেকবার নির্দিষ্ট সময়ের মাত্র ৫ মিনিট বাদে আসে। দুজনের বাকি কোয়ালিটি সব সমান। শুধুমাত্র পার্থক্য পাঁচ মিনিটে। পাঁচ মিনিটে কী আসে যায়! 

কিন্তু আপনার যখন বাছাই করার সময় আসবে, তখন এই দুজনের মধ্যে আপনি কাকে বাছবেন? নিশ্চয়ই যে সময়ে আসবে আপনি তাঁকে কাজ দেবেন। অন্যের কাছে তাঁকে রেফার করবেন। নিজের প্রয়োজনের সময় আপনি তাঁর উপরে ভরসা করবেন। দুজনের মধ্যে বাকি সব কোয়ালিটি সমান থাকলেও একজন পাচ্ছে আরেকজন পাচ্ছে না। 

কেন? ওই পাংচুয়ালিটির জন্য। একই জিনিস আমাদের সাথে প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলে। আপনি পাংচুয়াল না হলে প্রতি মুহূর্তে কোনও না কোনও ফর্মে অন্যের থেকে শুনবেন: তুমি তো সময় আসতে পারবে না, তুমি তো নিশ্চয়ই দেরি করবে। তোমার উপর তো ভরসা করা যাবে না। তোমাকে তো দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। বারে বারে বারে বারে লোকের থেকে শুনতে শুনতে এবং নিজেরাও করতে করতে এক সময় আমরা বিশ্বাস করা শুরু করব যে হ্যাঁ। আমাকে দিয়ে দায়িত্ব নেওয়া হবে না। 

ফলস্বরূপ আমরা দায়িত্ব নেওয়া থেকে, গুরুত্বপূর্ণ বা ভালো কাজে জড়ানোর থেকে ধীরে ধীরে সরে যাব। আমাদের চাকরি বা ব্যবসা বা সংসারে ভালো কাজ বা ইনপুট দেওয়ার জায়গা থেকে যদি আমরা সরে যাই। জীবন যদি ইনপুট দেয়া বন্ধ করে দিই। তাহলে আউটপুট আসাও বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ গোটা দুনিয়া গিভ অ্যান্ড টেক ইট সিস্টেমে চলে। আমি দেওয়া কমাতে থাকলে, পাওয়াও কমতে থাকবে। এতে নিজের পছন্দের জীবন থেকে দূরে সরে যাব আমরা। কাজেই বাঙ্গালীর টাইম বলে ছেড়ে দিয়ে বসে থাকলে হবে না। Punctuality হতেই হবে। তো এই পাংচুয়াল টা হবেন কীভাবে তার ৫টি সহজ উপায় নিচে দেয়া হলো:

পাংচুয়াল (Panctual) হওয়ার পাঁচটি সহজ উপায়


এই আর্টিকেলে এমন সহজ পাঁচটি উপায় নিয়ে আলোচনা করা হবে, যেটা আমাদের দৈনন্দিন রুটিনের মধ্যে বিশাল কোনও পরিবর্তন না করেই প্রয়োগ করা যায়। তাই শেষপর্যন্ত সঙ্গে থাকুন। 

এই দুনিয়ায় যে কোনও একটি কাজ করতে হলে, সেই সময়ে করা যেত এমন অন্য কোনো একটি কাজকে স্যাক্রিফাইস করতেই হবে। অর্থাৎ একসাথে দুটি কাজ করা যাবে না। আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠে টয়লেট থেকে বেরিয়ে হাঁটতে চলে যেতে পারেন অথবা ফিরে গিয়ে বিছানায় শুতে পারেন। দুটোর মধ্যে কোনও একটি করতে পারেন। এটা করলে ওটা ছাড়তে হবে। দুটো একসাথে চলবে না। 

এই যে আমরা আমাদের জীবনে এই কাজটা করি এবং ঐ কাজটা করি না। এই বাছাইয়ের ব্যাপারটা আসে আমাদের প্রায়োরিটি থেকে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ভেবে দেখুন, আপনি যা কিছু কে প্রায়োরিটি দিয়েছেন আপনার জীবনে সেগুলো হয়েছে। যেগুলোকে প্রায়োরিটি দেননি, আপনার জীবনে সেগুলো হয়নি। একই ভাবে পাংচুয়াল হওয়া বা না হওয়ার ব্যাপারটাও প্রায়োরিটির উপর নির্ভর করে। 

ভাল করে দেখে নিন: আপনার প্রায়োরিটি তালিকায় ঠিক কী কী থাকছে, শুধুমাত্র সেই কাজগুলো করার পেছনে মাথা ঘামান বাকি গুলোকে বাদ দিয়ে। দুনিয়ার সব কাজ একসাথে একই বারে আপনাকে করে ফেলতে হবে এমন কোনও ব্যাপার নেই। এমনকী আপনি না থাকলেও দুনিয়ার সব কাজ খুব ভাল ভাবে চলবে। কোথাও কিছু আটকাবে না। কাজেই নিজের প্রায়োরিটি সেট করুন। কাজ বাছাই করুন মাত্র দু ধরণের কাজ করুন। এক যে যে কাজ না করলেই নয় এবং দুই যে গুলো কাজ আপনি খুব ভাল পারেন। এই দুটো বাদ দিয়ে বাকি সব কিছু তালিকা থেকে ছেঁটে ফেলুন। আপনি দেখবেন আপনি অনেক হালকা হয়ে গেছেন এবং প্রায়োরিটি সেট করে নিলে পাংচুয়াল হওয়ার পথে আপনি অনেকটা এগিয়ে গেলেন। 

সহজে পাংচুয়াল হওয়ার ৫ ধাপ: 
প্রথম ধাপ হল: ৩০ মিনিট আগে থেকে তৈরি হওয়া
দ্বিতীয় ধাপ হল: না বলা
তৃতীয় ধাপ হল: ট্র্যাফিকের খেয়াল রাখা
চতুর্থ ধাপ হল: বাস্তবসম্মত সময় দেওয়া,
পঞ্চম ধাপ হল: হাতে একটি বই রাখা

প্রথম ধাপে ৩০ মিনিট আগে থেকে তৈরি হওয়ার ব্যাপারটা কি? মানে আপনার যদি 4:00 টায় রওনা দেওয়ার কথা থাকে, আপনি সাড়ে তিনটের মধ্যে উঠে পড়ুন। উঠে পড়ুন মানে, যে কাজ করছিলেন তার থেকে ফিজিক্যালি উঠে পড়বেন। টয়লেটে চলে যান, কাগজপত্র গোছানো শুরু করে দিন, ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসুন। বাকি সবাইকে ডেকে বললেন যে আপনি বেরোচ্ছেন এতক্ষণ পরে ফিরবেন অথবা ফিরবেন না। 

মাঝে কেউ আপনার খোঁজ করলে কী বলতে হবে, না হবে, সেটা জানিয়ে দিন। এইভাবে ৩০ মিনিট আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলে আপনি সঠিক সময় অবশেষে রওনা দিতে পারবেন। 

দ্বিতীয় ধাপে না বলার ব্যাপারটা কি? এই যে আপনি রওনা দেওয়ার সময় ৩০ মিনিট আগে থেকে তৈরি হওয়া শুরু করেছেন। এর মাঝে যদি কিছু ঢুকে যেতে চায় সেটাকে পরিষ্কার না বলুন। ওটাকে ঝুলিয়ে দিন পরে এসে করবেন। পরের দিন করবেন। আপনার বেরনোর ব্যাপারটা আগে থেকে যেহেতু ঠিক করা আছে, কাজেই এই মুহূর্তে সেটাকেই করতে হবে অন্য কিছুতে না বলতে শিখুন। 

তৃতীয় ধাপে ট্র্যাফিকের খবর রাখার মানেটা কি? আপনাকে যদি আপনার প্রতিদিনের পরিচিত রাস্তা দিয়েই যেতে হয়, আপনি নিজেই ভালো করে জানবেন রাস্তায় ট্র্যাফিক কেমন থাকে। মাঝে কোন রেলগেট আছে কিনা তার সাথে খবর নিন। আজ কোথাও কোনও অবরোধ মিছিল বা কোনও ভিআইপি মুভমেন্ট আছে কিনা। নতুন রাস্তায় যেতে হলে গুগল ম্যাপের শরণাপন্ন হন। গুগল ম্যাপ এ আগে থেকেই দেখে নিন কোথায় লাল দেখাচ্ছে তার জন্য আপনার কতটা সময় লাগতে পারে সেই অনুযায়ী প্ল্যান করুন। 

দেখুন জ্যামে আটকে থাকা এমনিতেই বিরক্তিকর। তার সাথে যদি শিডিউল করে যাওয়ার ভয় থাকে ব্যাপারটা আরও বেশি কষ্টের হয়। আগের থেকে বুঝে শুনে আপনি সময় দিন। আপনি ১০ টায় পৌঁছবেন বলে ১১ টায় পৌঁছলেন। আপনি ভীষণ লেট! মোটেই পাংচুয়াল নন। কিন্তু আপনি ১১ টায় পৌঁছবেন বলে যদি ১০:৫৫ তে পৌঁছান অর্থাৎ মাত্র ৫ মিনিট আগে পৌঁছালেন। তাহলে আপনি ভীষণ পাংচুয়াল। 

সাময়িক এফিসিয়েন্সি দেখাতে গিয়ে খুব অবাস্তব বা খুব টাইট শিডিউলের সময় দিতে যাবেন না। আপনি একবার ফেল করলে, লোকের মাথায় ওটাই থেকে যাবে। কাজেই নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী টার্গেট সেট করুন। আপনার পাংচুয়াল হোক কে আটকায়। 

পঞ্চম ধাপে হাতে সব সময় একটি বই রাখুন। প্রত্যেকবার যে আপনি লেট হবেন তা তো নয়। আপনি সময়ে পৌঁছচ্ছেন কিন্তু অন্য পক্ষ দেরি করছে। হতেই পারে। বেশির ভাগ সময় তাই হয়। তাঁরা তো আর আপনার মতে ৫টা টেকনিক অ্যাপ্লাই করছেন না। তাঁদের দেরি হতেই পারে। এবার তাঁদের জন্য অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হওয়ার সময়টাকে কাজে লাগান। আপনি তো ছেড়েও চলে আসতে পারছেন না। আপনাকে তো ওখানে থাকতে হবে। কাজেই নিজের মন মেজাজ ভাল রাখার জন্য এবং জ্ঞান বাড়ানোর জন্যই ঐ সময় বই পড়তে থাকুন। 

আপনার প্রতিদিন যে ১০ পাতা করে বই পড়ার কথা কিংবা তার বেশি। আলাদা করে সময় না দিয়ে এই সময় পাংচুয়াল আপনি ঢিলেঢালা দুনিয়ার বাকি মানুষদের জন্য অপেক্ষা করার সময় টায় বই পড়ে কাজে লাগান। আর আপনাকে বই পড়তে দেখে আস্তে আস্তে যদি কোনও সুন্দরী এসে আপনার বই নিয়ে প্রশ্ন করে, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। ধীরে সুস্থে সময় নিয়ে তাকে নিজের জ্ঞানের পরিচয় দিয়ে ভবিষ্যতে কোনও কফিশপে বসে আরও বই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার রাস্তা খোলা রাখুন। বইয়ের বদলে আপনি মোবাইলে পিডিএফ পড়তে পারেন, তবে কাগজে বইয়ের মত অনুভুতি তেমন পাবেন না।

Punctuality যে জীবনে কত ভাবে কাজে লাগে তাঁর শেষ নেই। কিন্তু পাংচুয়াল হবেন টা কিভাবে এই সহজ ৫টা উপায় প্রয়োগ করুন। আপনার জীবন বদলে যাবে। আর হ্যাঁ, জীবন সম্বন্ধে আরও জানতে আমার এই ওয়েবসাইটটি আপনার পছন্দের তালিকায় রাখুন এবং বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন।
আর্টিকেল টি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
পরবর্তী প্রবন্ধ পূর্ববর্তী প্রবন্ধ
মন্তব্য নেই
মন্তব্য করুন
comment url