গুগল অ্যাডসেন্সের টাকা Rocket একাউন্টে কত তারিখে আসে?
আমরা যারা গুগল এডসেন্স ব্যবহার করে থাকি। বিশেষ করে যারা প্রথম এডসেন্স নিয়ে কাজ করছেন, তারা অনেকেই ব্যাংক একাউন্ট হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং রকেট ব্যবহার করে থাকেন। রকেট একাউন্ট ব্যবহার করার কারণ হচ্ছে, অ্যাডসেন্সের টাকা সরাসরি হাতে চলে আসে। অর্থাৎ টাকার জন্য ব্যাংকে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন হয় না।
রকেট একাউন্ট কি?
রকেট হচ্ছে একটি বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। যা ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (DBBL) এর অধীনে। অর্থাৎ রকেট একাউন্ট এর মূল নাম বলা যায় “ডাচ্ বাংলা ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং”। মোবাইল ব্যাংকিং গুলোর মধ্যে এই সময়ে শুধুমাত্র 'রকেট'ই অনলাইন টাকা উত্তোলনের সুবিধা দিয়ে থাকে। এবং এই অ্যাকাউন্টটি বিশ্বাসযোগ্য। যার কারণেই অনেকেই গুগোল অ্যাডসেন্সে ব্যাংক একাউন্ট হিসেবে রকেট অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার করে।রকেট মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা অসুবিধা কি?
প্রথমেই অসুবিধা দিয়ে শুরু করি। অসুবিধা হচ্ছে: বর্তমানে ৩০,০০০ টাকার ঊর্ধ্বে লেনদেন করা যায় না। অর্থাৎ একটা নির্দিষ্ট পরিমান বেঁধে দেয়া রয়েছে। সহজ কথায় বলতে গেলে, আপনার অনলাইন মাসিক ইনকাম যদি ৩০ হাজার টাকার বেশি হয়ে থাকে তাহলে রকেট একাউন্ট আপনার জন্য নয়। যাদের অনলাইন ইনকাম প্রতি মাসে ৩০ হাজারের নিচে তারা এই অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার করতে পারেন। বর্তমানে আমি রকেট একাউন্ট ব্যবহার করছি। যেহেতু আমার ইনকাম একটু কম। তবে আশা করা যায় আগামীতে রকেট একাউন্টে টাকা লেনদেনের পরিমাণ বাড়বে। আরেকটি অসুবিধার মধ্যে রয়েছে, এই একাউন্টে এডসেন্স এর টাকা দেরিতে আসে।এবার আসাযাক সুবিধায়। এই একাউন্টের সবচেয়ে সুবিধা হচ্ছে: আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, টাকা সরাসরি আপনার মোবাইলে চলে আসবে। এর জন্য ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই। আর আপনি তো জানেন ঐ রকেটে টাকা এখন সর্বত্র উত্তোলন করা যায়। এর এজেন্ট বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গায় রয়েছে। সবকিছু দিনদিন মর্ডান হচ্ছে, এখন মানুষ সময়ের সদ্ব্যবহার করতে জানে। সকলই নিজের কাজ চটজলদি করতে ইচ্ছুক। তাই মোবাইলের লেনদেন, সুযোগ-সুবিধার উপর মানুষের আস্থা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এটা বলা যায় যে, ভবিষ্যতে মোবাইলেই হবে মানুষের ই-মানিব্যাগ।
অ্যাডসেন্সের টাকা রকেটে কত তারিখে আসে?
এটাই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। যারা প্রথম অ্যাডসেন্সে ব্যাংক একাউন্ট হিসেবে রকেট ব্যবহার করেছেন, তারা এই বিষয়টা নিয়ে অনেক টেনশনে থাকেন। যেহেতু আমরা জানি গুগল এডসেন্স প্রতিমাসের ২১ থেকে ২২ তারিখের মধ্যে টাকা পাঠিয়ে দেয়। তারপর এই টাকাগুলো বিভিন্ন দেশের ব্যাংকগুলোয় জমা হয়। কাস্টমারদের কাছে গুগল এডসেন্স থেকে সময় দেয় ৫ কর্মদিন। অর্থাৎ ব্যাংক বন্ধের দিন ব্যতীত, পাঁচ দিনের মধ্যে এডসেন্সের টাকাটা আপনারা একাউন্টে পাবেন। ধরা যাক, গুগোল টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে ২২ তারিখে। আমাদের দেশে ২৩ এবং ২৪ তারিখ সরকারি ছুটি ছিল। এখন কি হবে যেহেতু পাঁচ দিনের মধ্যে টাকা দেয়ার কথা। কিন্তু দুই দিন বন্ধ থাকার কারণে ওই দুই দিন বাদ পাঁচদিন ধরতে হবে। কিন্তু আমাদের রকেট এর অধীনে পড়ে না! রকেট টাকা দিয়ে থাকে মাসের ২৮ থেকে ২৯ তারিখের মধ্যে। তবে প্রথম বার টাকা পেতে আরো দুয়েক দিন দেড়ি হতে পারে। আমি নিজেই প্রথম বার পরের মাসের ২ তারিখ টাকা পেয়ে ছিলাম।রকেটে অ্যাডসেন্সের টাকা এত দেড়িতে আসে কেন?
গুগোল যখন টাকাটা বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দেয়, তখন সেই টাকাটা প্রথমে যায় দেশের প্রধান ব্যাংকে। অনেকেই বলতে পারেন, দেশের প্রধান ব্যাংকে কেন টাকা আসে?এর উত্তর হলো: বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার আয় এবং ব্যয়ের হিসাব রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিদেশ থেকে আমদানি-রপ্তানি খাতে কত টাকা লেনদেন এই সকল হিসেবের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের (রেমিট্যান্স এর হিসাব)। এছাড়াও যদি কেউ সরাসরি বিদেশি টাকা এক্সচেঞ্জ করে, সেটা বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যতীত অন্য ব্যাংকে চেঞ্জ করা অবৈধ। অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত ব্যাংক বা এজেন্টের মাধ্যমে বিদেশি টাকা চেঞ্জ করা যায়। মোটকথা অনলাইনেই হোক অথবা সরাসরি হোক, বৈধভাবে টাকা লেনদেনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের শরণাপন্ন হতেই হবে।
আমাদের প্রধান ব্যাংক হলো বাংলাদেশ ব্যাংক। 'বাংলাদেশ ব্যাংক' টাকা গুলো প্রসেসিং করে দেয় দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে। আবার সেই ব্যাংকগুলোর যদি মোবাইল ব্যাংকিং থাকে, তাহলে সেই ব্যাংক তার একটি আলাদা তালিকা তৈরি করে।
ধরুন, এডসেন্স বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা পাঠিয়ে দিলো ২২ তারিখে। 'বাংলাদেশ ব্যাংক' থেকে প্রসেসিং হয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংকে টাকা চলে এলো ২৩ তারিখে। এখানে সরাসরি ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের কাস্টমার টাকা পাবেন ২৩ তারিখ থেকে।
মেইন হিস্টোরি: আপনি ২৩ তারিখ সকালে গিয়ে ব্যাংকে বললেন, 'আমাকে টাকা দিন! ব্যাংক-ওয়ালা বলল: ভাই, টাকা বিকেলে আসবে পরে দেখা করেন😁? এখন প্রশ্ন হচ্ছে টাকাটা কি সত্যি বিকেলে আসবে নাকি রাত্রেও আসতে পারে?! তাই আমাদের সরাসরি টাকা তোলার সময়টা ২৩ তারিখের বদলে ২৪ তারিখ ধরে নেওয়াটাই উত্তম। সহজ কথায়, যে তারিখে টাকা আসবে সে তারিখের আশা না করাটাই ভালো।
অপরদিকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সিস্টেম টা আরো এক ধাপ এগিয়ে 😆। সবচেয়ে রকেটের মাধ্যমে বেশিরভাগ চাকরিজীবী টাকা উত্তোলন করে থাকেন। ব্যাংকে প্রথমে একটা লিস্ট তৈরী করা হয়, কার একাউন্টে কত টাকা এসেছে এবং পাঠাতে হবে। তাই এই টাকাগুলো ব্যাংকের হিসাবরক্ষকগণ এক এক করে অ্যাকাউন্ট চেক করে মোবাইলে টাকা সেন্ড করে দেন। এতে প্রচুর সময় লাগে। অনেক নাম এবং নাম্বার টাইপ করতে হয়। বুঝাই যাচ্ছে কষ্ট ও ধৈর্য সাপেক্ষ কাজ। অর্থাৎ পাঁচ থেকে ছয় দিনের বেশি সময় লাগে। যার কারণে সরাসরি ব্যাংকের চেয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা দেরিতে পৌঁছায়।
আমি অ্যাডসেন্সের প্রথম টাকা ২ তারিখে টাকা পেয়েছি ২০২২ সালে। এতে সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে; কেউ যদি সরাসরি ব্যাংক থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে টাকা হাতে পায়, তাহলে আপনি রকেটে টাকা পাবেন তাদের থেকে কয়েকদিন পর। অর্থাৎ সরাসরি ব্যাংকের থেকে এক সর্বোচ্চ সপ্তাহ পরে। তবে হয়ত; আগামীতে ব্যাংকের কর্মচারীর সংখ্যা বাড়িয়ে অথবা প্রযুক্তির উন্নয়নে ডাচ-বাংলা এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে আসতে পারে।
যদি আপনার অ্যাডসেন্সে আপনার রকেট একাউন্ট এর তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করে থাকেন। তাহলে অবশ্যই আপনি টাকা পাবেন। অন্যথায় ভয়ের কিছু নেই, আপনি সরাসরি ডাচ-বাংলার রকেট হেল্পলাইনে কল করে টাকা না আসার কারণ জানতে পারেন। ডাচ-বাংলা রকেট হেল্পলাইন নাম্বার: ১৬২১৬। আর হ্যাঁ, একটি কথা মনে রাখতে হবে! তা হচ্ছে— মোবাইলে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা রেখে কাস্টমার কেয়ারে কল দেবেন। কারণ, বাংলাদেশের কল সেন্টার গুলোতেই অটোমেটিক ভয়েস গুলো বেশি কথা বলে। অমুক করতে তমুক বাটন চাপুন! তমুকের সাথে প্যাঁচাল পারতে অমুক বাটন চাপুন। আপনাকে এখন সরাসরি কাস্টমার কেয়ারে সংযোগ দেয়া হচ্ছে, দয়া করে একটু অপেক্ষা করুন.............