কোন ভাষায় এবং কি বিষয় নিয়ে আপনি ব্লগিং শুরু করবেন?
ভাষা নিয়ে আলোচনা করতে হলে আমাদের আগে হিসেব করে দেখতে হবে, কোন ভাষার লোক সংখ্যা বা প্রচলন বেশি। তারপর ভাবতে হবে যে আপনি কোন ভাষায় বেশি অভিজ্ঞ।
কারণ— যে ভাষায় মানুষ বেশি কথা বলে, সে ভাষার ভিজিটর বেশি পাওয়া যায়। ভাষার রেংকিং এ পৃথিবীতে প্রথম স্থানে রয়েছে ইংরেজি ভাষা। এখন আপনি চিন্তা করলেন ইংরেজিতে কনটেন্ট লিখলে ভিজিটর আমি বেশি পাব। তাই বোধহয় ইংরেজীতেই আমার কনটেন্ট লেখা উচিত।
কিন্তু সেই ক্ষেত্রে আপনাকে কয়েকটি বিষয়ে ভাবতে হবে, তা হল সেই ইংরেজি ভাষা সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা। আপনি ইংরেজি ভাষাতে মানুষকে বুঝাতে পারবেন কিনা। আপনি যদি ইংরেজিতে দুর্বল হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার সে ভাষায় কন্টেন লেখা উচিত নয়। এতে আপনার পরিশ্রম বৃথা যাবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি হচ্ছে— ইংরেজি ভাষাতে যেমন ভিজিটর বেশি আছে, তেমনি এই ভাষাতে হাজার হাজার ওয়েবসাইট ও কনটেন্ট রয়েছে। সেই সকল ওয়েবসাইটের সঙ্গে আপনাকে টক্কর দিয়ে প্রথম স্থানে থাকতে হলে; বাঘা বাঘা ইংরেজি ওয়েবসাইটগুলোর সঙ্গে টেক্কা দিতে হবে🤔।
এখন আপনি কি করবেন, ঘাবড়ে গেলেন? ঘাবড়াবার কোন কারণ নেই! আপনি যদি আপনার মাতৃভাষাতে মানুষকে ভাল বোঝাতে পারেন এবং আপনার মাতৃভাষার লোকজন যদি প্রযুক্তির সঙ্গে সংযুক্ত থাকে, তাহলে আপনি আপনার মাতৃভাষায় ব্লগিং করতে পারেন। বর্তমানে বাংলা ভাষায় ব্লগিং করে অনেকেই প্রতি মাসে এক জন সাধারণ চাকুরিজীবীর থেকেও ভালো টাকা ইনকাম করছে।
আর যে কথাটি না বললেই নয়; বাংলা ভাষাতে বাংলা কনটেন্ট এর চাহিদা অনেক বেশি। সেই দিক লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বাংলা কনটেন্টের খুবই অভাব। বিশেষ করে ভাল মানের কনটেন্ট।
কোন বিষয়গুলো মানুষ বেশি খোঁজ করে?
এর উত্তরে আমি বলব; যে বিষয়গুলো মানুষের প্রয়োজন বা যে বিষয়ে মানুষ জানতে চায়। সহজ কথা হলো, যার যেটা জানবার ইচ্ছা বা চাওয়া সে সেটাই মনে মনে খুঁজে। তাই আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে যে, মানুষ কি খোঁজে অথবা কি বিষয়ে জানতে চাচ্ছে। আপনাকে তাদের খোঁজ করা ও চাওয়ার বিষয় গুলোই লিখতে হবে। হয়তো কোন বিষয়ে মানুষ বেশি খোঁজে আবার কোন বিষয়ে কম খোঁজে। কোন বিষয়ের দিকে আগাবেন এটা আপনার উপড় ছেড়ে দিলাম।
আপনি যে আমার পোস্টটি পড়ছেন; এটা দিয়ে একটা উদাহরণ দেই। ওয়েবসাইটে আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত সার্চ করতে থাকি, যতক্ষণ না আমরা আমাদের মন পছন্দ মত তথ্য পাই। আপনি যদি আমার পোস্টে পর্যাপ্ত পরিমাণ তথ্য না পান। তাহলে অবশ্যই এই বিষয়ে আবারো সার্চ ইঞ্জিনে তথ্য খুঁজবেন।
কিভাবে বুঝবেন আপনি কোন বিষয়ে ভালো করবেন
আগেই বলেছি, যে বিষয়ে আপনি ভাল জানেন অর্থাৎ মানুষকে ভাল বুঝাতে পারবেন সেই বিষয়ে ব্লগিং করুন। হুট করে ব্লগিং শুরু করতে যাবেন না। একটু সময় নিয়ে চিন্তা করুন। ধরুন, আপনি একটা বিষয় নিয়ে ব্লগিং শুরু করলেন। কয়েকদিন ভালোভাবেই প্রবন্ধ লেখালেখি করলেন। হঠাৎ করে দেখা গেল ওই বিষয়ে আর কোন আইডিয়া বা চিন্তা খুঁজে পেলেন না। তখন কিন্তু বিষয়টা মোটেই সুবিধার হবে না। তাই যে বিষয়টা নিয়ে আপনি দীর্ঘদিন লিখতে পারবেন সে বিষয় সম্পর্কে আপনার আগানো উচিত। যেহেতু মানুষের জানার ইচ্ছা ও চাওয়া-পাওয়ার শেষ নেই। তেমনি ব্লগিং করার বিষয়াদির অভাব নেই।
এমনকি আপনি যদি কয়েকটি বিষয়ে একসঙ্গে লিখতে পারেন এটাও আপনার জন্য ভালো। পৃথিবীর বড় বড় ব্লগাররা একটি ব্লগেই বিভিন্ন বিষয়ে পোস্ট করে থাকে। শুধু এটুকুই খেয়াল রাখতে হবে। আপনি যে বিষয়ে লিখুন না কেন, তা যেন বিস্তারিত এবং তথ্য সমৃদ্ধশালী হয়। আর অবশ্যই প্রবন্ধ গুলিকে ক্যাটাগরি (বিষয়) অনুযায়ী ভাগ করতে হবে।
বাংলা ভাষায় দর্শক এবং ইনকাম কি রকম হবে?
অনেকেই মনে করেন, বাংলা ভাষায় ব্লগ লিখলে ইনকাম কম হয় এবং দর্শক কম পাওয়া যায়। এই কথার কোন ভিত্তি নাই। আমাদের ইনকামের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে এডসেন্স। বিশেষ করে গুগল এডসেন্স। কিছু লোক বলে থাকে: বাংলা আর্টিকেল এ গুগল এডসেন্স CPC কম দেয় (Cost Per Click> প্রতি গুতায় অর্থ)। তবে, যতটা কম আমরা ভাবি ততটা না। সাধারণত তার থেকে বেশি দেয়।
গুগল এডসেন্স এর এই দুর্নাম তারাই করে, যাদের ওয়েবসাইটে ভিজিটর কম এবং অনিয়মিত ব্লগিং করেন। একদিন পোস্ট লিখে একমাস ঘুমিয়ে থাকে। বিশ্বাস করুন; তারাই এই সব ভুয়া তথ্যের প্রচারক।
আপনি যদি নিয়মিত পোস্ট লেখেন এবং দাঁত কামড়ে, কোমর বেঁধে ব্লগিং করেন। আপনার ওয়েবসাইটে যদি প্রতিদিন 1000 ভিজিটর আসে এবং গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল থাকে। আপনার ইনকাম দেখে আপনি নিজেই খুশিতে পেদে ফেলবেন 💨।
আর দর্শক! দর্শক নিয়ে টেনশন করবেন না। মনে করুন আমি যে বিষয়ে পোষ্ট দিয়েছি, আপনি যদি আমার থেকেও ভালো ভাবে এই বিষয়ে পোস্ট লিখতে পারেন। তাহলে আমার থেকে আপনার পোস্টটা সার্চ ইঞ্জিনে আগে দেখাবে এবং আমার থেকে আপনি বেশি ভিজিটর পাবেন।
কপি বা Google translate করা পোস্ট থেকে বিরত থাকুন
অনেকেই গুগল ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে অন্য ভাষার পোস্ট অনুবাদ করে নিজের ব্লগে ছেড়ে দেন। এতে করে সেই পোস্ট গুগলের রেঙ্ক করে না। কারণ, গুগল অনুবাদ করা পোষ্ট গুলোকে কপি হিসেবে গণ্য করে। অর্থাৎ আপনি তো গুগলের অনুবাদ গুগলকেই দেখাচ্ছেন 🫣। এটা আহম্মকী ছাড়া অন্য কিছু নয় 🤗।
যেহেতু গুগলের কাছে অসংখ্য তথ্য আছে তাই ঐ তথ্যগুলো সকল ভাষার মানুষের বোধগম্য করার জন্যেই গুগল ট্রান্সলেটর।
তবে আপনি যদি নিজের ভাষায় কন্টেন্ট লিখে সেই লেখাকে Google translator দিয়ে অনুবাদ করেন, তাহলে সেটা কপিপোস্ট ধরা হবে না। কারণ, এখানে মুল লেখাটি আপনার নিজের। কিন্তু অনুবাদ গুলো হয়তো তেমন ভালো হবে না। এর জন্য আপনাকে নিজে থেকেই অনুবাদ করা বাক্য বা শব্দের ভুল ত্রুটি গুলো সংশোধন করতে হবে।
নিয়মিত সাইটে লেখা প্রকাশ করুন
ব্লগিং করার জন্য আপনাকে একটা নির্দিষ্ট সময় বেছে নিতে হবে। যে সময়টিতে আপনি নিয়মিত পোস্ট করতে পারবেন। সেটা পার্ট টাইমও হতে পারে আবার ফুল টাইমও হতে পারে। অর্থাৎ আপনাকে নিয়মিত হতে হবে। একটা কথা মাথার ভিতরে ঢুকিয়ে ফেলুন! সেটি হল ফাও বা পরিশ্রম ছাড়া কখনো টাকা রোজগার করা যায় না (শুয়ে-বসে ভিক্ষা ব্যতীত)।
Google ওয়েবসাইটকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে, একটি হচ্ছে নিয়মিত আরেকটি হচ্ছে অনিয়মিত। যারা নিয়মিত ওয়েবসাইটে পোস্ট আপডেট দেয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের ওয়েবসাইটকে গুগল টপ রেংকিংয়ে রাখে। আর যারা অনিয়মিতভাবে পোস্ট করে- স্বাভাবিক ভাবেই তারা ডাউন পজিশনে থাকে।
সুতরাং আপনি ব্লগিং-এ বা ওয়েবসাইটে অনিয়মিত হলে আপনার ব্লগকে বা সাইটকে সার্চ ইঞ্জিনে ডাউন করে দেয়। ফলে ভিজিটর কম আসবে এবং ইনকাম কম হবে।
তবে ব্যস্ততার কারণে যদি দু-দিন পোস্ট নাও দেন; সেটা কোন সমস্যা না। সময় করে আবার নিয়মিত হলে, পুনরায় আপনার ওয়েবসাইট আগের পজিশনে ফিরে আসবে।
টুকটাক ব্যয়ের চিন্তাভাবনা মাথায় রাখুন
তবে বাংলা ভাষাতে একটি কথা অবশ্যই বলতে হবে, সেটি হচ্ছে আপনি যদি কোন প্রোডাক্ট বেচা কেনার জন্য ব্লগিং করে থাকেন, তাহলে পণ্য বিক্রির জন্য আপনি সোশ্যাল মিডিয়ার সহযোগিতা নিতে পারেন। অর্থাৎ আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়াতে অ্যাকাউন্ট খুলে পণ্য বিক্রি করতে হবে এবং পণ্যের ডিটেইল বর্ণনা করার জন্য আপনি ব্লগিং করতে পারেন। সর্বোপরি সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশি জোর দিতে হবে।
কারণ, সোশ্যাল মিডিয়াকে বলা হয় “মাছের বাজার”। আর মাছের বাজারে ক্রেতার চেয়ে দর্শক বেশি। মাছের বাজার থেকে দর্শকেরা বাড়িতে গিয়ে বড় বড় মাছের গল্প শোনায় স্বজনদের। সেই স্বজনেরা ওই গল্প রিপ্লাই করে শোনায় তাদের স্বজনদের। আর এভাবেই ওই মাছের বাজারে সেই বড় বড় মাছ দেখতে আরো দর্শকের আগমন ঘটে এবং বিক্রি বেড়ে যায়।
আর সত্যি কথা বলতে কি; বেচাকেনার ব্লগিং গুলো নির্ভর করে বেশি বিজ্ঞাপন প্রচারের উপর। আপনি যত প্রচার করতে পারবেন, যত বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন, তত সফলতা লাভ করবেন। এখানে একটু খরচাও আছে।
এছাড়াও, বেশি ট্রাফিক পাবার জন্য ভালো ডোমেইন ও হোস্টিং এর দরকার আছে। প্রয়োজনে সাইট সাজাতে ওয়েব ডেপ্লভপারদের সহায়তা নিতে হতে পারে। তাই কিপ্টামি ঝেড়ে ফেলে দিয়ে একটু ব্যয়ের চিন্তাভাবনা মাথায় রাখতে হবে।
কোন ভাষায় এবং কি বিষয় নিয়ে আপনি ব্লগিং শুরু করবেন বিষয়ক পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ভালো লাগলো
ধন্যবাদ
Nice
ধন্যবাদ