আকাশে ওড়াউড়ি ও প্লেন আবিষ্কারের ইতিহাস

প্রাচীন কাল থেকেই মানুষের মনে আকাশে ওড়ার সাধ জেগেছে। মধ্য যুগে মানুষ পাখির দিকে তাকিয়ে থেকেছে, তাদের পাখা নাড়ায় স্পন্দিত হয়েছে, তাদের হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো দেখে তাদের মতো হতে চেয়েছে। উন্মুক্ত আকাশে স্বাধীনভাবে ওড়ার আনন্দ মানুষকে সবসময়ই প্রভাবিত করেছে। তাই মানুষের প্রথম ওড়ার ভাবনাটা এসেছে পাখিদের মতো করে ওড়ার চিন্তায়, তাদের কাছে প্রথমে মনে হয়েছে ওড়বার ব্যাপারটি সহজ। একজোড়া পাখা তৈরী করে, সেটা ঝাপটালেই আকাশে উঠে গিয়ে ইচ্ছেমতো ওড়া যাবে। বিশ্ববিখ্যাত ইতালীয় শিল্পী লেনার্ডো দ্য ভিঞ্চি আকাশে ওড়ার বিষয়টি প্রথম বৈজ্ঞানিকভাবে ভাবতে থাকেন। কিন্তু তার চিন্তা ভাবনা সবই ছিল অবাস্তব ধারণায় ঠাসা। আকাশে ওড়ার যন্ত্র আবিষ্কারের জন্য তিনি অনেকগুলো ড্রয়িং করেছিলেন। সেগুলোয় উৎসাহিত হয়ে পঞ্চদশ শতকে কয়েকজন উদ্ভাবক পাখা লাগিয়ে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা গেছেন। কেন তারা এভাবে মারা পড়লেন? ভুলটা কি ছিল? আমাদের মনে নিশ্চয়ই প্রশ্নটা জাগে। পাখিতো বেলুন নয়। সে বাতাসের চেয়ে ভারী, কিন্তু তারপরও পাখি পাখা ঝাপটিয়ে আকাশে উড়ে বেড়ায়। তাহলে মানুষ কেন পাখা লাগিয়ে আকাশে উড়তে পারবে না।

এ প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৮১২ সাল পর্যন্ত। স্যার জর্জ কেলে নামে অত্যন্ত প্রতিভাবান এক ইংরেজ ভদ্রলোকের শখ ছিল কতকগুলো ছোট ছোট মডেল তৈরী করে আকাশে ওড়ার ব্যবস্থা করা। এগুলো করতে যেয়ে তিনি এ্যারোডাইনামিক্সে (বায়ুগতিবিদ্যা)-এর কতকগুলো সূত্র আবিষ্কার করে ফেললেন। তিনি দেখালেন পাখি লাফ দিয়ে আকাশে ওড়ে না। ওড়ার সময় তাদেরকে পাখা ঝাপটিয়ে কিছুটা নীচু হয়ে উড়ে আস্তে আস্তে ওড়ার উচ্চতা পেতে হয়। আকাশে যে হাওয়া বইছে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য করে পাখিকে বাতাসে ভাসতে হয়। তিনি বেলুন ও পাখির মধ্যে তুলনা এনে এর পার্থক্য দেখিয়ে দিলেন। 

প্লেন আবিষ্কারের ইতিহাস

বেলুন হাওয়ার চেয়ে হাল্কা হওয়ায় আকাশে ভেসে থাকে-যেমন, কর্ক ভেসে থাকে পানিতে। বেলুন আকাশে ঘন্টার পর ঘন্টা ভেসে থাকতে পারে, কারণ বেলুনে ভরা গ্যাস আশেপাশের হাওয়ার চেয়ে হালকা। কিন্তু পাখি যদি আকাশে তার ডানা গুটিয়ে বসে থাকে তবে সে মাটিতে পড়ে যাবে। কারণ পাখি বাতাসের চেয়ে ভারী। তাকে আকাশে সারাক্ষণ গতি বজায় রাখতে হবে। তার পাখার উপরে নীচে বাতাসের প্রবাহ রাখতে হবে। পাখি সাধারণত ডানা ঝাপটায় ওড়া শুরু করার সময়টায়। কারণ ডানা ঝাপটিয়ে বাতাসের প্রবাহ সৃষ্টি করলে তবেই পাখি উপরে উঠতে পারবে। তাহলে বাতাসের চেয়ে ভারী কোন যন্ত্রকে হাওয়ায় ভেসে থাকতে হলে তাকে সারাক্ষণ গতিশীল থাকতে হবে; আর আকাশে উঠে পড়ার জন্য তাকে অবশ্যই ডানা ঝাপটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ সমস্ত বিষয়ই কেলের মাথায় গিজ গিজ করত। এ বিষয়ে তিনি কয়েকটি বইও লিখেছিলেন, এর উপরই নির্ভর করে এ্যারোডাইনামিক্স চালু হয়েছে। যদিও কেলের মডেল কিছুটা উড়তে পারত, কিন্তু তখনকার দিনে শক্তিশালী মোটর তৈরী হয়নি। 

এই মোটর দিয়ে মডেলের ব্লেড ঝাপটানোর দরকার ছিল যাতে বায়ু প্রবাহ সৃষ্টি করা যায়। কিছুদিন আগে জেমস ওয়াট বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার করেছেন। কেলে তার ওড়ার যন্ত্রে বাষ্পীয় ইঞ্জিন ব্যবহার করার কথা চিন্তা করেছিলেন, কিন্তু তিনি দেখলেন বাষ্পীয় ইঞ্জিন অনেক ভারী, ওড়ার জন্য মোটেই সুবিধের নয়। একদিন কেলেকে প্রাকৃতিক নিয়মে মৃত্যুবরণ করতে হলো। তিনি আকাশে উড়তে পারেননি। মরার সময় জানতেও পারেননি বিজ্ঞানের জন্য কি অসাধারণ অবদান তিনি রেখে গেলেন। ওড়ার বিদ্যায় পরবর্তী বিস্ময়কর অবদান রাখেন একজন গণিতজ্ঞ। তিনি ওয়াশিংটনের স্মিথসোনিয়ান ইন্সটিটিউটের সম্পাদক হিসেবে কাজ করতেন। তার বেলুনে চড়ার অভ্যাস ছিল, নাম ডঃ স্যামুয়েল পিয়েরপন্ট ল্যাঙলী। তিনি তার বিজ্ঞানের দক্ষতা আর অঙ্কের অভিজ্ঞতা দিয়ে বায়ু প্রবাহ ও আকাশে ওড়ার সমস্যাগুলি বুঝতে চাইলেন। এর মধ্যে ডেনিয়েল বারনৌলি নামের একজন সুইস বিজ্ঞানী পাখা তৈরীর উপর কিছু সূত্র তৈরী করেছিলেন। ডঃ ল্যাঙলীই প্রথম ডেনিয়েলের সূত্র কাজে লাগানোর কথা ভাবলেন। 

এই সূত্রগুলো এত প্রয়োজনীয় যে এগুলো ছাড়া কোন বিমানের পক্ষেই মাটি ছেড়ে উঠে যাওয়া সম্ভব নয়। সাধারণ কথায় সূত্রগুলো এরকম, যখন বায়ু প্রবাহ সমান গতিতে বইতে থাকে, সে অবস্থায় হঠাৎ বাতাসের গতি বেড়ে গেলে চাপ কমতে থাকে; আর বাতাসের গতি কমতে থাকলে বাতাসের চাপ বেড়ে যায়। ডঃ ল্যাঙলী ঠিক করলেন বিমানের পাখার উপরের অংশটা একটু বাঁকানো হওয়া দরকার আর নীচের অংশটা সমান। এতে পাখার উপরের হাওয়া জোর গতিতে সরে যাবে, আর পাখার নীচের হাওয়া বাঁধা না পেয়ে অপেক্ষাকৃত ধীর গতিতে যাবে। এই অবস্থায় ডেনিয়েলের সূত্র অনুযায়ী পাখার নীচের বায়ুর চাপ অনেক বেশী হবে, ফলে পাখিটিকে উপরের দিকে ঠেলে দেবে। এই মোক্ষম সূত্র ধরেই সমস্ত বিমান আকাশে ওঠে। মানুষ বহনকারী একটি বিমান কি করে তৈরী হবে; ল্যাঙলী অনেক হিসেব নিকেশ করে সেটা প্রকাশ করলেন। ১৯০৩ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর ল্যাঙলী একটি হাইড্রোপ্লেন তৈরী করে ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের পটোম্যাক নদীতে নিয়ে এলেন। 

নদীটিতে বেশ ঢেউ খেলে। প্লেনের ইঞ্জিনটি ঘরে তৈরী অমার্জিত ধরনের গ্যাসলিন ইঞ্জিন দিয়ে তৈরী। ল্যাঙলীর এ্যাসিস্ট্যান্ট জি. এইচ ম্যানলী বসলেন বিমানটির ভিতরে, চালকের আসনে থাকলেন ল্যাঙলী, বিমানটির মুখ হাওয়ার বিপরীতে রাখা হলো। ইঞ্জিন চালু হয়ে বিমানটি ওড়ার উপক্রম করে ছুটে এলো। কিন্তু কিছুদূর এগিয়ে আসার পর বিমানটির একটি ডানার নীচের অংশটি ভেঙ্গে পড়ে। ফলে ওড়া আর সম্ভব হয়নি, যন্ত্রপাতি নদীর তলায় চলে যায়। ম্যানলী বা বিমানটির কোন ক্ষতি হয়নি। ১৯০৩ সালের ৮ই ডিসেম্বর ল্যাঙলী বিমান ওড়াবার আবার চেষ্টা করলেন, আবারও একই কাণ্ড ঘটল। একেবারে হতাশ হয়ে, হাতের টাকা পয়সা শেষ করে ল্যাঙলী পরাজয় স্বীকার করে নিলেন। আর একটু উদ্যাম থাকলেই কিন্তু ল্যাঙলী সফল হতেন। আকাশে ওড়ার ইতিহাসে নিজের নাম রেখে যেতে পারতেন। আসলে যে ধরনের বিমান তিনি তৈরী করেছিলেন সেটার ওড়ার সম্ভাবনাই ছিল না। এটা ল্যাঙলীর মতো প্রতিভাবান মানুষ একটু ধৈর্য থাকলেই বুঝতে পারতেন। ল্যাঙলীর সময়টাতে আকাশে বিমান ওড়বার পরীক্ষা নিরীক্ষার ধুম পড়ে যায়। 

আমেরিকার অনেক বিজ্ঞানী বা সৈখিন ব্যক্তি বিমান ওড়াবার নানা ধরনের পরীক্ষা চালান। এদের মধ্যে কয়েকজনের নাম ইতিহাসে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে লিলিয়েন্থাল, চানিউট ও হেরিঙের নাম উল্লেখযোগ্য। অটো লিলিয়েন্থ তার বিশাল আকৃতির গ্লাইডার (ইঞ্জিন বিহীন বিমান) নিয়ে একের পর এক পরীক্ষা চালান। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তার বিমানটি ভেঙ্গে পড়ায় তার মৃত্যু হয়। আর চানিউট ও হেরিঙের তৈরী করা বিমান দুটো ছিল বিদঘুটে আকারের। এগুলোর ওড়ার সামান্যতম সম্ভাবনা ছিল না। এই সময় হুজুগে অনেক আমেরিকান যুবক গ্লাইডার বা বিমান ওড়ানোর খেলায় মেতে ওঠেন। এ্যারোডাইনামিক্সে নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা ছিল না। ঘুড়ি ওড়ানোর বদলে গ্লাইডার ওড়ানো যাক- তাদের মনোভাবটা ছিল এ ধরনের। এ সময় আর একটি জিনিস মানুষকে পেয়ে বসেছিল, তা হলো বাই সাইকেল। প্রায় প্রতিটি আমেরিকানের একটি করে বাই সাইকেল ছিল। ওহায়ও অঙ্গরাজ্যের ডেটনের একটি বাই সাইকেলের দোকানে বসে দু ভাই আলোচনা করছিল। 

আলোচনার বিষয় গ্লাইডার আর বিমান নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণার উপর পত্রপত্রিকায় লেখা সংবাদগুলো। এরা হলেন অরভিল আর উইলবার রাইট ভ্রাতৃদ্বয়। নিজেদের দোকানে সাইকেল বিক্রয় এবং মেরামত করে এরা মোটামুটি ভালই আয় রোজগার করতেন। 'চল আমরা একটা গ্লাইডার বানাই'। অরভিল উইলবারকে বললেন, 'আমাদের যা যান্ত্রিক জ্ঞান আছে তাতে আমরা ভাল মতোই একটা গ্লাইডার বানাতে পারব।' ১৯০০ সালের সেই গরমের দিনটিতে দু ভাই তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে বসলেন বিমান নিয়ে যত গবেষণা পরীক্ষা হয়েছে সেগুলো সম্পর্কে তারা খোঁজ খবর নিবেন, পড়বেন। সেগুলোর ভুল খুঁজে নিয়ে শোধরানোর চেষ্টা করবেন। ব্যাস! দু ভাই এবার এ্যারোনটিক্সের উপর লেখা হাতের কাছে যত বই, আর্টিকেল পাওয়া যায় সব পড়ে ফেললেন। 

বইগুলো তারা শুধু পড়লেনই না, আগেকার পরীক্ষা নিরীক্ষার ভুলগুলো টুকে নিয়ে এগুলোর সম্ভাব্য উন্নতি কেমন করে করা যায় নিজেদের মতো করে সেগুলোও লিখে রাখলেন, নোট করলেন। সমস্যা নানা ধরনের, কিন্তু দু ভাই তাতে বিচলিত হয়ে হটে এলো না। পরের তিনটি বছর তারা যন্ত্রপাতি তৈরী, পরীক্ষা নিরীক্ষায় কাটালেন। একের পর গ্লাইডার বানালেন, প্রতিটি আগেরটির চেয়ে উন্নততর। এ সব করতে গিয়ে তারা সবচেয়ে বেশী অর্জন করলেন আত্মবিশ্বাস। নিজেদের তারা বোঝাতে পারলেন, বাতাসের চেয়ে ওজনদার মেশিন তারা আকাশে ওড়াতে পারবেন। কিন্তু জনসাধারণের ধারণা ছিল উল্টো ধরনের। ততদিনে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন যন্ত্রপাতি দিয়ে আকাশে ওড়ার বাসনা কোনদিনই সফল হবে না। আমেরিকার পেটেন্ট অফিস আর এক কাঠি সরস। তারা কোন খোঁজ খবর না নিয়েই যান্ত্রিক ফাইং মেশিনের পেটেন্টের জন্য সব আবেদন নাকচ করে দেয়া শুরু করল। আজকের জন্য তাদের মনোভাব হাস্যকর হলেও ব্যাপারটি কিন্তু সত্য। তিন বছর অধ্যবসায়ের সঙ্গে তারা মডেল নিয়ে গবেষণা চালালেন।

সবচেয়ে বড় অসুবিধা ছিল উড়ন্ত বিমানটি কি করে নিয়ন্ত্রণ করবে সেও সমস্যার সমাধানও তারা বের করে ফেললেন। এ সময় আরও কয়েকজন গবেষণা করছিলেন। এদের পরস্পরের মধ্যে সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আলোচনা হতো। আরও দু তিন জনের মতো রাইট ভাইয়েরা ঠিক করলেন যে তাদের পরের গ্লাইডারে গ্যাসোলিনের মোটর লাগাবেন। মোটর তারা লাগালেন। ১৯০৩ সালের ১৭ই ডিসেম্বর নর্থ ক্যারোলিনার কিটি হক এলাকায় তারা আকাশে ওড়ার ব্যবস্থা করলেন। উইলবার রাইট তার বক্স-কাইট গ্লাইডারের নীচের পাখার মাঝে বসলেন। (গ্লাইডারটি ইঞ্জিনে ছিল হাতে তৈরী ১২ অশ্বশক্তির গা্যসোলিন মোটর; মোটরটি প্রপেলার চালানোর জন্য, প্রপেলারটি হাতে ঘুরিয়ে দিতে হতো। স্টার্ট দিতেই বিমানটি আকাশে উঠল। নড়বড়ে যন্ত্রটি আকাশে বার সেকেণ্ডের মতো রইল। ঘটনাটি ঘটল পোটোম্যাক নদীতে ল্যাঙলীর বিমানের ইঞ্জিন তলিয়ে যাবার মাত্র আট দিন পর। আকাশে ওড়ার প্রাথমিক সাফল্যে দু ভাই এবার একের পর এক ওড়ার মহড়া দিতে লাগলেন। তাদের ছোট্ট বিমানটিকে প্রথমবারের চেয়ে কিছু বেশী সময় অকাশে ওড়াতে সমর্থও হলেন। 

প্রথম দিকে বিমানটি শুধু উপরে উঠত, চতুর্থবারে মিনিটে ৯০০ ফিটের মতো উড়তেও পারল। এতদিনে মানুষের আকাশ জয়ের স্বপ্নসাধ পূরণ হলো। সে সময় থেকে মানুষ বাতাসের চেয়ে ভারী যন্ত্রচালিত বিমান আকাশে ওড়াতে সক্ষম হলো। সে সময়ের সে আবিষ্কার একদিন কোথায় পৌছুবে, সভ্যতার জন্য কত জরুরী বিষয় হয়ে দাঁড়াবে সে দিনের মানুষ তার কিছুই বুঝতে পারেনি। তারা ভেবেছিল এসব আকাশে ওড়াউড়ি নিছক ছেলে খেলা। কিছু বায়ুগ্রন্থ মানুষের হুজুগ। পরের তিন বছর রাইট ভাইয়েরা একের পর এক উড়ার মহড়া চালালেন। ১৯০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তারা বিমানটির অনেক যান্ত্রিক খুঁটিনাটি উন্নয়ন করলেন তাতে কয়েক মাইল পর্যন্ত তারা উড়তে পারলেন।

এর পরও জনসাধারণ এদেরকে পাত্তা দিল না। মানুষের মনে একবার কুসংস্কার গেড়ে বসলে, সহসা তার থেকে সে বের হয়ে আসতে পারে না। অবস্থা এমন হলো রাস্তার সাধারণ লোক থেকে শুরু করে বিজ্ঞানীরা পর্যন্ত ভাব দেখালেন, আমাকে করে দেখাও তবে বিশ্বাস করব। আসলে ১৯০৯ সালে বিখ্যাত ফরাসী আকাশচারী লুই ব্রেরিয় তাঁর এক পাখার বিমানে করে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেবার আগে পর্যন্ত বিশ্ববাসী বিমানে আকাশ ভ্রমণকে অলীক কল্পনা মনে করত। ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেবার জন্য ডেইলী মেইল পত্রিকা ব্লেরিয়কে এক হাজার পাউণ্ড পুরস্কার দিয়েছিল। এই ঘটনার পর পরই নানা ধরনের বিমান প্রস্তুতির জন্য বিপুলভাবে গবেষণা করা হতে থাকে। 

প্রকৌশলীদের নিয়োগ করা হয় বিমানে ব্যবহৃত গ্যাসোলিন ইঞ্জিনের উন্নয়ন সাধনের জন্য। বিমানের প্রপেলারের ডিজাইন উন্নত করা হয়। প্রপেলার ঘোরানোর জন্য আর সহকারীর দরকার হলো না। বিমান আকাশে উড়বার জন্য মাটি ছাড়বার সুবিধার জন্য বিমানের নীচে চাকা বসানো হলো। এ্যারোডাইনামিক্স বিজ্ঞান দ্রুত প্রসার লাভ করতে লাগল। ১৯১০ সালে গ্লেন এইচ, কারটিস সাফল্যজনকভাবে উড়ন্ত নৌকা বা সী প্লেন তৈরী করলেন। কয়েক বছর পর তিনি কারটিস ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন গঠন করে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিমান তৈরী করে বিশ্ববাজারে ছাড়লেন। প্রথম মহাযুদ্ধের পর বিমানে যাত্রী চলাচলের ব্যবস্থা করা হলো। ১৯১৯ সালের ৩রা মে প্রথম যাত্রীবাহী বিমান নিউইয়র্ক থেকে নিউজার্সির আটলান্টিক সিটিতে পৌঁছল।
আর্টিকেল টি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
পরবর্তী প্রবন্ধ পূর্ববর্তী প্রবন্ধ
মন্তব্য নেই
মন্তব্য করুন
comment url